• পাঁচ বছর পর স্বপ্নভঙ্গ বস্তিবাসীর
আবদুল্লাহ আল মামুন
পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে ২০১৩ সালে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উচ্ছেদ করা হয় বস্তিবাসীদের। নির্মাণ করা হয় সাততলা ভবন। ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা বলে বস্তিবাসীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় টোকেন মানিও। এরই মধ্যে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বপ্নের ফ্ল্যাটের দেখা মেলেনি। ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার পর, এখন ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া নিয়ে সিটি করপোরেশনের টালবাহানার কারণে গরিবের ফ্ল্যাটের স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তারা। তবে বস্তিবাসীর জন্য নির্মাণ করা ভবন অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহারকে ‘অনৈতিক’ বলছেন বিশিষ্টজনরা। উচ্ছেদ করা বস্তির বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত থেকে সিটি করপোরেশন সরে এসেছে কিনা তা নিয়ে কোনো সদুত্তর নেই কর্মকর্তাদের কাছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ‘ভবন নির্মাণ কতটুকু শেষ হয়েছে এটা আমার পুরোপুরি জানা নেই। বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে তাদের ফ্ল্যাট দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয় করার চিন্তাভাবনা চলছে।’
তবে এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বস্তিবাসীদের জন্য সিটি করপোরেশনের স্বল্পমূল্যে ফ্ল্যাট প্রকল্পটি খুব ভালো এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। ভবনটি যে উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে, সেখান থেকে সরে এসে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা হলে তা হবে অযৌক্তিক ও অনৈতিক।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের দাবির মুখে ২০১০ সালে বাটালী পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা ঝুঁকিপূর্ণ বস্তি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। বস্তির বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে ২০১৩ সালে বস্তিটি উচ্ছেদ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৩ জন বস্তির গরিব লোকজনের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি ও হলফনামা নেয় সিটি করপোরেশন। তখন প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য ধরা হয়েছিল ৬ লাখ টাকা। ফ্ল্যাটের জন্য এককালীন টোকেন মানি হিসেবে সিটি করপোরেশন নিয়েছিল ১০ হাজার টাকা করে। মাসিক আড়াই হাজার টাকা কিস্তিতে এ মূল্য পরিশোধ করার শর্ত দেওয়া হয়েছিল তাদের। ২০১৩ সালে টাইগারপাসে ১২ কাঠা আয়তনের নিজস্ব জায়গার ওপর প্রায় ৭ কোটি টাকায় ভবন নির্মাণকাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। সাততলা ভবনটির কাজ প্রায় শেষ বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মঞ্জুরুল ইসলাম চৌধুরী। ২০১৫ সালে নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে পরিবর্তন আসে। মেয়র নির্বাচিত হন আ জ ম নাছির উদ্দিন। এরপর বস্তিবাসীদের জন্য নির্মাণাধীন ভবনে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সিটি করপোরেশন। শুরুতে ফ্ল্যাটগুলো বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সমালোচনার মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বস্তিবাসীদের কোনো ফ্ল্যাট এখনো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া বস্তির বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ‘ফ্ল্যাট দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ৫০ বছরের পুরনো বস্তি কোনো বাধা ছাড়াই উচ্ছেদ করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। বস্তির বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছে। এখন ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দিয়ে নানা কথা বলছে। মেয়রের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। আমাদের তো আর হারানোর কিছু নেই। সিটি করপোরেশন যদি আমাদের বঞ্চিত করার চিন্তাভাবনা করে, তাহলে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করব। এছাড়া আমাদের আর কোনো পথ খোলা নেই। পাঁচ বছর ধরে ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নতুন নগর ভবন নির্মাণকাজ শুরু হলে টাইগারপাসে নির্মাণাধীন ভবনটিতে অস্থায়ী কার্যালয় করা হবে। যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে, তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা নগর পরিকল্পনাবিদ ভালো বলতে পারবেন।’ এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে বস্তিবাসীদের জন্য ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন আবার সেখানে কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী কার্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বস্তিবাসীদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’